Logo

রাজনীতি    >>   ড. ইউনূসকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

ড. ইউনূসকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

ড. ইউনূসকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

দেশে সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে এবং বিভিন্ন সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহবান জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। তবে, এ জন্য সরকারকে কোন সময় বেধে দেয়া হয়নি বলেও দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম এই ছয়টি দলের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলসহ সংবিধান সংশোধনের বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুই মেয়াদের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান চালুরও দাবি জানানো হয়। জাতীয় সংসদে ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের প্রস্তাব করেছে কোন কোন রাজনৈতিক জোট।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে সংস্কারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে এসব সংস্কারের কতদিন সময় লাগবে কিংবা বর্তমান সরকার কতদিন দায়িত্বে থাকবে সেটি নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের জন্য যৌক্তিক সময় কতদিন তা সংস্কার প্রস্তাবের পরই বলা যাবে।

তিনি বলেন, কতদিন সময় লাগবে তএখনই বলার সুযোগ নেই। তবে সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোন সময় বেধে দেয়া হয় নি।

প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুইবার থাকার দাবি হেফাজত এর

প্রধান উপদেষ্টার সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হেফাজতে ইসলামসহ ছয়টি ইসলামী দল বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবে না বলে প্রস্তাব জানানো হ। সেই সা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করার দাবিও জানিয়েছে তার।

বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছি আমরা। তারাও বলেছেন সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করবেন।

এই যৌক্তিক সময় কতদিন হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মি. হক বলেন, এই যৌক্তিক সময় কতদিন হবে সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন আলোচনা হয় নি।তাদের পক্ষ থেকেও কোন ধরনের সময়ও বেধে দেয়া হয় নি বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন বণ্টনে সংস্কার প্রস্তাব করে সমমনা এই ছয়টি ইসলামী দল।

বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের এই নেতা বলেন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ও প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনা, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রিক ক্ষমতা না রেখে ভারসাম্য তৈরি করা সহ আরো কিছু সাংবিধানিক সংশোধন আনার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।

এছাড়া হেফাজতে ইসলামের নামে বিভিন্ন সময় হওয়া মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্ত্বরসহ বিভিন্ন ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজদের তালিকা প্রস্তুতসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের দাবিও জানান তারা।

নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় ইসলামী আন্দোলন

হেফাজতে ইসলামের পরই বৈঠক হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সাথে।

সেখানে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণার দাবি জানায়। একই সাথে দলটির পক্ষ থেকে ১৩ দফা লিখিত প্রস্তাব জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে।

বৈঠক শেষে ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় এই নির্বাচনে কালো টাকার দৌরাত্ন এবং পেশিশক্তি যাদের আছে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা সেই পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলেছি।

চরমোনাই পীর হিসাবে পরিচিত মি. করীম বলেন, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন হতে হবে। দল ও মার্কা থাকবে। যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে সেই অনুযায়ী পার্লামেন্টে থাকবে সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে।

নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে ভোট আয়োজন করার কথাও জানিয়েছে এই ইসলামী দলটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি করার তাগিদ দিলেও এ জন্য কোন সময় বেধে দেয়া হয় নি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই নেতা বলেন, আমরাও নতুন সরকারকে আশ্বাস দিয়েছি, ভাল কাজে ও দেশ গড়ার ব্যাপারে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় এলডিপি

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও সংস্কারের পর ভোটের দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এলডিপি।

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে দলের চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেছেন, খুব ছোট কারণে জামায়াতের নিবন্ধন যদি বাতিল করা হয় তাহলে হাজারো ছেলে মেয়েদের হত্যা ও গুমের কারণে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল হবে না কেন?

এখনো দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এন দাবি করে তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে বলেছি আপনি এখনো বিপদমুক্ত নন। এখনো যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। হাসিনার পদলেহন করা ব্যক্তিরা এখনো চাকুরিচ্যুত হয় নি।

বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ ও দলীয় কর্মকর্তাদের শুধু বদলি না করে শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানায় দলটি।

একই সাথে শিগগিরই পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের পর জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে দলটি।

নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে, এমন সময় সীমা আগে থেকে ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এলডিপি চেয়ারম্যান মি. আহমেদ।

তবে তিনি বলেন, সংস্কার করার পূর্বে নির্বাচন হওয়া কোন অবস্থাতেই বাঞ্ছনীয় না। আগে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।

পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি জাতীয় পার্টির

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে পক্ষে মতামত দিয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসনে ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার প্রয়োজন। যে সব কাজগুলো নির্বাচিত সরকার করতে পারে না, সে সব কাজগুলো যেন করা হয়। আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছি। এছাড়া একই ব্যক্তি যাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী না হয় সেই দাবি আমরা জানিয়েছি।

হেফাজতে ইসলামের মতো একই দাবি জাতীয় পার্টিরও। একই ব্যক্তি দুই বারের বেশি যাতে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারে সে জন্য সংবিধান সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মি. হক বলেন, সংস্কারগুলো করে তারপর নির্বাচনের চিন্তা করতে পারে। আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সংস্কারে। আমরা চাই সংস্কারগুলো আগে করা হোক। সংস্কারগুলোর পরে ভোট হোক সেটা আমরা চাই।

বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি যেসব রাজনৈতিক দল

শনিবারের এই বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় ঐক্যজোট অংশ নেয়।তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বাম গণতান্ত্রিক জোটকে বৈঠকে ডাকা হয় নি।

এই বৈঠকে আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ (বিএসপি)সহ আরো কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।